Header Ads

আমার বউমাকে যখন আমার ছেলের জন্য নিয়ে আসি

 

আমার বউমাকে যখন আমার ছেলের জন্য নিয়ে আসি



আমার বউমাকে যখন আমার ছেলের জন্য নিয়ে আসি, সে নিতান্তনই অল্পবয়সী বালিকা ছিলো! মাত্র ষোল বছর! গ্রামে ষোল বছর খুব কমও নয়!! কিন্তু আমার মেয়েদের তুলনায় মেয়েটা বাচ্চা! আমার দুই মেয়েরই বিয়ে হয়েছে অনার্স কমপ্লিট করার পর, সেখানে মেয়েটি মাত্রই এস এস সি দিলো।

তো এত অল্প বয়সী মেয়েকে ছেলের বউ করে আনলাম কেন? কারণ আমি না আনলেও অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো। আর সবচেয়ে বড় ব্যপার মেয়েটিকে আমার ছেলের পছন্দ হয়েছে।
আমার ছেলে ইয়াসির ওর বয়স ২৫।
ইয়াসিরের দাদী আমার শাশুড়ি, খুব অসুস্থ হয়ে যায়। উনি বারবার করে বলছিলেন,
উনি মারা যাওয়ার আগে যেন বংশের প্রথম নাতি বউ দেখেই মারা যায়। ইয়াসির মাত্রই পরীক্ষা দিয়ে ওর বাবার বিজনেসে একটু আধটু হেল্প করতে শুরু করেছে।
বিয়ের জন্য চাপ দেওয়াতে প্রথমে রাজী না হলেও পরে রাজী হয়ে যায়।
ইয়াসিরের জন্য গ্রামে অন্য একটি মেয়ে দেখে আসার পথে সুমাইয়ার সাথে দেখা হয়। বাচ্চাদের সাথে মার্বেল খেলছিলো। যদিও ইয়াসির যে মেয়েটিকে দেখতে গিয়েছিলো, তাকে পছন্দ হয়নি কিন্তু ওই মার্বেল খেলারত শ্যামলা বর্ণের সুমাইয়াকেই কীভাবে যেন ওর ভালো লেগে যায়। বাসায় এসে বললো,
--মা আমি ওই মেয়েটাকেই বিয়ে করতে চাই!
: কোন মেয়ে? তুই না বললি, তাকে তোর পছন্দ হয়নি!
--সে নয়, অন্য একটি মেয়ে। মা, তুমি দেখনি আমরা আসার সময় একটি মেয়ে হঠাৎ করেই আমাদের দেখে ওড়না দিয়ে মুখ ডেকেছিলো।
: ওহ আচ্ছা, কিন্তু মেয়েটার চেহারা তো দেখিনি। আর তাছাড়া মেয়েটাকে বিয়ে দেবে কি না! দেখতে তো অল্পবয়সী মেয়েই মনে হলো।
-- হুম মা অল্পবয়সী মেয়েই মনে হলো, তবে চেহারা আমি দেখেছি। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের, মায়াবতী!!
: আচ্ছা ঠিক আছে আমরা তোর মামার সাথে কথা বলে নিই। মেয়েটার ব্যপারে খোঁজ খবর নিই, কোন বাড়ির মেয়ে দেখতে হবে তো । সবচেয়ে বড় কথা মেয়েকে বিয়ে দিবে কি না দেখি!
তাছাড়া আরেকটু দেখলে ভালো হতো। তুই এই একটু দেখাতেই কীভাবে বুঝলি মেয়েটাকে তোর ভালো লেগেছে।
-- না মা, আমাকে আর দেখতে হবে না, আমি যতটুকু দেখেছি তাতেই হবে। যদি তোমার মন চায়, সবাইকে নিয়ে একবার দেখে এসো তবে সেদিন পাকা কথা বলে আসতে হবে।
: আচ্ছা, ঠিক আছে দেখি!
পরবর্তীতে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি ওরা ইতিমধ্যেই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য কয়েকটা পাত্র দেখিয়েছে! ভালো পাত্র পেলেই বিয়ে দিয়ে দিবে। হয়তো মেয়ে পক্ষের পছন্দ হয়নি, নয়তো ছেলে পক্ষের। তাই এখনো বিয়ে দেয়নি। গ্রামের পরিবেশ এমনিই! খুব অল্পবয়সেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়! সুমাইয়ার বাবা এতই তাড়াহুড়া করছে, সুমাইয়ার রেজাল্টের জন্যও অপেক্ষা করছে না। অবশ্য শুনেছি মেয়েটি পড়ালেখায় যথেষ্ট ভালো।
নির্দিষ্ট দিনে সুমাইয়াকে আমার ছেলের বউ করে আনি। মেয়েটি প্রথম দিকে খুব বেশিই ভিতু টাইপের ছিলো। খুব ভুল করতো। বাড়ির মেহমানদের সাথেও ঠিকমতো কথা বলতে পারত না।
এক অদ্ভুত জড়তায় নিজেকে আড়াল করে রাখতো! যদিও সবাই বলতো,
-- আজকালকার মেয়ে এত বোকা না! এই মেয়ে অতি চালাক। কাজ কাম না জানার ভান কইরা চুপ কইরা থাকে যেন কাজ করতে না হয়!
এমনকি আমার মেয়েরাও বলে উঠলো,
--মা এইসব গ্রামের মেয়েরা যাদু, টোনা জানে। তুমি আবার এর হাতের কিছু খেয়ো না।
আমার দুই মেয়ে, দুই জনেরই খুব ভালো ঘরে বিয়ে হয়েছে।
দুইজনই চায়নি কোন গ্রামের, অল্পশিক্ষিত মেয়ে আমার বাড়ির বউ হউক।
মেয়েটি অল্পবয়সী হতে পারে কিন্তু ওর মধ্যে আমি অন্যরকম এক বিচক্ষণতা দেখেছি। হয়তো এইটা চালাকি! চল চাতুরী!! মাঝেমাঝেই সুমাইয়ার উপর খুব রাগ হতো, খুব খুব! এতো ভুল করবে কেন?!
বিয়ের তিন মাসেও কেন বাড়ির নিয়ম শিখে উঠতে পারেনি।
কীভাবে কি করি! ভাত রান্না করতে দিলে, হয়তো পুড়ে ফেলে, নয়তো পানি বেশি। তরকারি রান্না করতে দিলে; হয়তো লবন কম, নয়তো লবনের জন্য মুখে দিতে পারি না।
মাঝেমাঝে খুব বকা দিই। ওকে ওর মা কিচ্ছু শিখাইনি কেন?! আসলে রাগে বকা এসে যায়। কী করব!
একটি বারের জন্যও ভেবে দেখলাম না, আমার বড় মেয়ে তাসনিও এমন ছিলো। বিয়ের আগে কিচ্ছুই জানতো না। আমার আদরের বড় মেয়ে তাই কোন কাজ করতে দিইনি। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর সব হাতে কলমে শিখিয়েছি। ছোটটাকে অবশ্য এত শিখাতে হয়নি, সে মোবাইল থেকে কীভাবে যেন দেখে মজা করে রান্না করে ফেলে।
কিন্তু সে' তো আমার মেয়ে। পড়ালেখা করতে করতেই দিন চলে যেতো অন্য কাজ কীভাবে করবে!? আর আমি তাকে দিয়ে কীভাবে কাজ করায়!
চলবে....

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.